বাতের ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন জেড. এইচ সিকদার
উইমেন্স মেডিকাল কলেজের ফিজিওথেরাপি বিভাগ পিপলস পেইন ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড
রিহ্যাবিলিটেশন ক্লিনিকের প্রধান কনসালটেন্ট ডা. শিবলী নোমানী।
তিনি জানান, অস্থিসন্ধী বা হাড়ের জোড়ার ব্যথাকে আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা
বলা হয়। গবেষকরা এ পর্যন্ত শতাধিক বাতের ব্যথার ধরণ আবিষ্কার করেছেন। তবে
সচরাচর মেরুদণ্ড, হাঁটু, কোমরেই বাতের ব্যথা বেশি দেখা যায়।
আবার শরীরের এসব অংশে ব্যথা হওয়া মানেই বাত নয়। মাংসপেশির জটিলতার কারণেও ব্যথা হতে পারে।
কারণ: ডা. শিবলী নোমানী বলেন, “সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পরই বাতের ব্যথার
জটিলতা দেখা যেত। তবে বর্তমান যুগে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে ৩০ বছর
বয়সের বাতের ব্যথায় আক্রান্ত রোগীও পাই আমরা।”
তিনি আরও বলেন, “দৌড়ে যানবাহনে ওঠা, হাড়ে আঘাত পাওয়া, বয়সের কারণে হাড় ক্ষয়
হয়ে যাওয়া ইত্যাদি এই জটিলতার মূল কারণ। এছাড়াও অতিরিক্ত
কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার কিংবা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার কারণেও বাত
হতে পারে। বর্তমান সময়ের খাবারের ভেজাল এই রোগের পেছনে অনেকটা দায়ী।”
রক্ত পরীক্ষা, এক্সরে ইত্যাদির মাধ্যমে বাত আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
প্রতিরোধ: ডা. নোমানী বলেন, “আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অ্যালোভেরা, আদা, কাঁচাহলুদ, পুদিনাপাতা
ইত্যাদি গুল্মজাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ইউরিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ
খাবার যেমন কলিজা, গুর্দা, ডাল ইত্যাদি খাওয়া কমাতে হবে। শর্করা,
কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের পরিমাণও কমাতে হবে।”
চিকিৎসা: কিছু বাতের ব্যথা ওষুধ ছাড়াই সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যেই সেরে যায়।
তবে হাড়ের ক্ষয়ের কারণে যে বাতের ব্যথা হয় তা পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়।
এই চিকিৎসকের ভাষায়, “বয়স বাড়ার সঙ্গে হাড়েই ক্ষয় হবে, এটাই স্বাভাবিক
নিয়ম। একে থামানোর কোনো উপায় নেই। তবে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের মাধ্যমে এই
ক্ষয়ের পরিমাণ কমানো যায়, নিয়ন্ত্রণে আনা যায় ব্যথা।
তিনি আরও বলেন, “বাজারে বাতের ব্যথা সারানোর বিভিন্ন চৌম্বকীয় পাথর বসানো
চেইন বা ব্রেসলেট পাওয়া যায়। প্রাচীন চীনা চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী,
চুম্বকের কিছু ব্যথা নিয়ামক গুণাবলী রয়েছে। তবে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর
কোনো আলোচনা নেই।”
রোগীর জন্য চিকিৎসকের উপদেশ: প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আসলে আর অন্যান্য শারীরিক জটিলতা না থাকলে হাঁটাহাঁটির
অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ১০ মিনিট ধরে হাঁটা শুরু করতে হবে। শরীরের অবস্থা
অনুযায়ী এই সময় ক্রমেই বাড়াতে হবে। লক্ষ হবে প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটা।
সাঁতার কাটা বাতের মহৌষধ। তাই সুযোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাঁতারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।