যে
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা
করছি তা আমাদের নিত্যদিনের অনুষঙ্গ অর্থাৎ একই তেলে বার বার ভাজা। এটা সারাবছর
ধরে হোটেল-রেস্তোরায় চলে । কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক। প্রথমেই
আমাদের জানা দরকার একই তেল বার বার উত্তপ্ত করলে করলে তেলের কী কী পরিবর্তন হয়-
তেলের এসিডিটি বেড়ে যায়ঃ
একই তেলে বার বার ভাজলে সে তেলে ফ্রী ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।ফ্রী ফ্যাটি এসিড যেহেতু নিজে একটা এসিড তাই তেলে এর পরিমাণ বাড়লে তেলের এসিডিটিও বেড়ে যায়।আয়োডিন ভ্যালু,পারঅক্সাইড ভ্যালু ও কার্বোনিল ভ্যালু এগুলো তেলের ফ্রী ফ্যাটি এসিডের মাত্রা নির্দেশক।নীচে পাম তেলকে বার বার হিট দিলে এসব ভ্যালু নির্দেশকের কী ধরণের পরিবর্তন ঘটে তার একটি তালিকা উপস্থাপন করা হলোঃঅটোঅক্সিডেশনঃফী ফ্যাটি এসিড অক্সিজেনের উপস্থিতিতে খুব সহজেই বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে সর্বনাশা ফ্রী রেডিক্যাল তৈরী করে।ফ্রী রেডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব দেহের সর্বত্রই বিশেষতঃ ভাইটাল অর্গান যেমন লিভার,হার্ট ও কিডনীর উপর সুস্পষ্ট দৃশ্যমান।আমরা যে ধীরে ধীরে বুড়ো হয়ে যাচ্ছি তার পেছনে রয়েছে এ শত্রুটি।আমরা অনেকেই এন্টি-অক্সিডেন্ট শব্দটার সাথে পরিচিত।অনেকেই সুস্বাস্থ্যের জন্য ও যৌবন ধরে রাখতে এন্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন (যেমন Tab.REX) বা এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন-অাপেল (আপেল নিয়ে একটা প্রবাদই আছে-An apple a day keeps the doctor away) গ্রহণ করে থাকি।একই তেল বার বার ভাজার কাজে ব্যবহার করলে তাতে প্রচুর পরিমাণে ফ্রী রেডিক্যাল তৈরী হয় যা আমাদের মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি ঘটায়।আপনাদের অবগতির জন্য ইঁদুরের হার্ট,কিডনী ও লিভারের উপর এরকম তেল ভক্ষণের কী মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছিল তার হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল প্লেট উপস্থাপন করা হলো (Nitte University Journal of Health Science,NUJHS Vol. I, No.4, December 2011,
ISSN 2249-7110 থেকে প্রাপ্ত )-
ট্রান্স ফ্যাটঃতেলকে বার বার হিট দিলে এর সম্পৃক্ত চর্বি ভেঙ্গে ফ্রী ফ্যাটি এসিডে রূপান্তরকালে ট্রান্স ফ্যাট তৈরী হয়।এই ট্যান্স ফ্যাট শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
এইচ.এন.ইঃ HNE (4-hydroxy-trans-2-nonenal) একটি মারাত্মক বিষ।একই তেলকে বার বার হিট দিলে তাতে HNE তৈরী হয়।
দূষণঃ ভাজা তেলে অনেক খাদ্যকণা থাকে যার উপর বিভিন্ন ব্যকটেরিয়া ও মোল্ডের সংক্রমণ হয় এবং তাদের নিঃসৃত তাপ প্রতিরোধী টক্সিন তেলে মিশে যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এরূপ তেলের ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী?
গ্যাট্রিকের সমস্যাঃযেহেতু বার বার হিট দেওয়া তেলের এসিডিটির মাত্রা বেশী তাই এ তেল বা এ তেলে ভাজা খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই বুক জ্বালাপোড়া,পেটে ব্যাথা,ডায়রিয়া হতে পারে এবং যাদের পেপটিক আলসার জনিত সমস্যা আছে তা বেড়ে যেতে পারে।যারা নিয়মিত হোটেলে খাবার খেয়ে থাকেন তারা প্রায়ই এধরণের সমস্যার মুখোমুখি হন।একারণে ইফতারির শুরুটা ভাজা খাবার দিয়ে শুরু না করাটাই স্বাস্থ্যসম্মত।সবচেয়ে ভাল হয় সিদ্ধ খাবার দিয়ে ইফতারি করা।ফ্রী রেডিক্যালজনিত ক্ষতিঃশরীরের এমন কোন কোষ নাই যার উপর ফ্রী রেডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব নেই।এটা শুধু প্রদাহই করে না কোষকে মেরেও ফেলে।এর সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায় রক্তনালী ও হৃদপিন্ডে,লিভারে,কিডনীতে এবং ব্রেনে।ফ্রী রেডিক্যালের জন্য আমাদের ত্বকও স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে জড়জড় হতে থাকে যা আমরা রিংকেল বা বলিরেখা হিসাবে দেখে থাকি।এই বলিরেখার জন্যই আমাদেরকে বয়স্ক দেখায়।সুতরাং যারা তারুণ্য ধরে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত তাদের জন্যও এটা সর্বনাশী।
ট্র্যান্স ফ্যাটজনিত ক্ষতিঃট্যান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণে সৃষ্ট হৃদরোগে (coronary heart disease) খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ১৯৯৪ সালে মারা গেছেন ৩০,০০০ জন মানুষ এবং ২০০৬ সালে ধারণাভিত্তিক ১,০০,০০০ জন মানুষ।এছাড়াও ট্র্যান্স ফ্যাটের কারণে আরও যে রোগগুলো হতে পারে সেগুলো হলো-ক্যান্সার,টাইপ-২ ডায়াবেটিস,স্থুলতা,অ্যালজেইমারস ডিজিজ,লিভারের সমস্যা,বন্ধ্যাত্ব,বিষন্নতা,অস্থির ও আক্রমণাত্মক আচরণ ইত্যাদি।
এইচ.এন.ই জনিত ক্ষতিঃএই বিষ খাদ্য থেকে অতি দ্রুত শোষিত হয়ে আমাদের রক্তে চলে যায় এবং ডি.এন.এ, আর এন.এ ও অন্যন্য কার্যকরী প্রোটিনের সাথে রিঅ্যাক্ট করে নানা রোগ তৈরী করে যার মধ্যে আছে ক্যান্সার,অালজেইমারস ডিজিজ,পারকিনসন্স ডিজিজ ও হান্টিংটনস ডিজিজ এবং লিভারের নানা অসুখ।
কোলেষ্টেরল বাড়ায়ঃনিয়মিত এরূপ তেল ভক্ষণ করলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেষ্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়।আমরা সবাই জানি বাড়তি কোলেস্টেরল স্বাস্থ্যের জন্য কত ক্ষতিকর।নীচে ইঁদুরের উপর চালানো এক পরীক্ষায় যে তথ্য পাওয়া গেছে তা উপস্থাপন করা হলো (Nitte University Journal of Health Science,NUJHS Vol. I, No.4, December 2011,
ISSN 2249-7110 থেকে প্রাপ্ত )-
আশা করি বুঝতে পেরেছেন ভাজার কাজে ব্যবহৃত একই তেলকে বার বার ব্যবহার করলে তার তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যহানি কত মারাত্মক হতে পারে।আমরা এ ব্যাপারে নিজেরা সচেতন হই ও অন্যদেরকেও সচেতন করে তুলি এবং বাইরের ভাজা খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলি।
1 comments:
commentsGreat post and success for you..
ReplyKontraktor Pameran
Kontraktor Booth Pameran
Jasa Pembuatan Booth
Jasa Dekorasi Booth Pameran
Jasa Pembuatan Booth Pameran