আমরা যা খাই তার পুষ্টি উপাদান ও পানি পরিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরে
শোষিত হয়। অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো বর্জ্য হিসেবে মলে পরিণত হয়। অন্ত্রের পেশীর
সংকোচনের মাধ্যমে মলকে ঠেলে কোলন বা বৃহদান্ত্রে পাঠায়। সেখান থেকে
রেক্টামের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যখন কোলনের মাংশ পেশী নিষ্ক্রিয়
হয়ে যায় তখন কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এর ফলে ইরেগুলার বাউয়েল মুভমেন্ট হয় এবং
স্টুল শক্ত ও শুষ্ক হয় ফলে মলত্যাগে করা কঠিন হয়ে পরে। বেশিরভাগ মানুষেরই
অনিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। আবার কেউ কেউ সারা জীবনই ভোগেন। বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে ভ্রমণের সময় এটি হয়ে থাকে এবং ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই বেশি ভোগে
থাকে।
কন্সটিপেশন দুই ধরণের হয় যথা – অর্গানিক ও ফাংশনাল। অর্গানিক কন্সটিপেশন হয়
শারীরিক পরিবর্তনের কারণে, যেমন- কোলনের মধ্যে কোন বাঁধা বা বিকৃতি হলে।
এই ধরণের কন্সটিপেশনের ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়। ফাংশনাল
কন্সটিপেশন হয় – সঠিক প্রকারের খাদ্যগ্রহণ না করলে, যথেষ্ট পরিমাণে তরল
খাদ্য না পান করলে, নিয়মিত স্ট্রেসের মধ্যে থাকলে, সঠিক জীবনধারা মেনে না
চললে।
উচ্চমাত্রার প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলেই ফাংশনাল কন্সটিপেশন হয়। এই
জাতীয় খাবারে পুষ্টি উপাদান ও ফাইবারের পরিমাণ খুব কম থাকে এবং স্বাস্থ্যের
জন্য ক্ষতিকর অ্যাডেটিভস থাকে। এর ফলে কোলনের দেয়াল দুর্বল হয়ে পরে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য যে কাজগুলো আপনি করতে পারেন তা হল :
১। বেশি পরিমাণে ফাইবার গ্রহণ করা
দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় এই দুই ধরণের ফাইবার আছে। এই উভয় ধরণের ফাইবারই
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারে। দ্রবণীয় ফাইবার শরীরের বর্জ্যের পরিমাণ
বৃদ্ধি করে ও নরম করে। অদ্রবণীয় ফাইবার মলের পরিমাণ করে। আস্ত শস্যদানা,
পাস্তা, গমের ভুষি খাওয়া অনেক কার্যকরী হতে পারে।
২। সাহায্যকারী খাদ্য
নাশপাতি, ডুমুর, ব্রোকলি, কিউই, গাজর, পীচ ফল, আনারস এবং ডুমুর ইত্যাদি
ফলগুলো নিয়মিত খান। এগুলোতে ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং প্রচুর
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়াও প্রচুর ফাইবার থাকে বলে অন্ত্রের জন্য
ভালো। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক চামচ ব্ল্যাকস্ট্রিপ গুড় খান। সকালে এটি আপনার
কনস্টিপেশনকে সহজ করতে সাহায্য করবে। আখের গুড়কে অনেকবার জাল দিয়ে ঘন করে
ব্ল্যাকস্ট্রিপ মোলাসেস তৈরি করা হয়। তাই এতে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও
মিনারেল বিশেষ করে ম্যাগনেসিয়াম থাকে বলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষভাবে
সাহায্য করে।
৩। এড়িয়ে চলুন এই খাবার গুলো
চকলেট, অনেক বেশি পরিমাণে দুগ্ধজাত পণ্য, লাল মাংস, কলা ও ক্যাফেইন।
ক্যাফেইন গ্রহণ করা নির্ভর করে আপনি ইতিমধ্যেই পানিশূন্যতায় ভুগছেন কিনা
তার উপর। যদি পানিশূন্যতায় ভুগে থাকেন তাহলে ক্যাফেইন গ্রহণ না করাই ভালো।
৪। নিয়মিত ব্যয়াম
সক্রিয় জীবনধারা মেনে চলুন যেমন- দৌড়ানো, জগিং করা, সাঁতার কাটা বা
অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করা। এর ফলে আপনার পরিপাক নালী স্বাস্থ্যবান থাকবে ও
অন্ত্রের উপর ভালো প্রভাব ফেলবে।
৫। হারবাল চা ও উষ্ণ পানীয়
পুদিনা ও আদা উভয়েই পরিপাকের সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করে। মেন্থল অন্ন
নালীর পেশীকে শিথিল হতে সাহায্য করে। আদা তাপ প্রদানকারী গুল্ম তাই আদা
শরীরের ভেতরে অধিক তাপ সৃষ্টি করে। হারবাল চিকিৎসকদের মতে আদা নিষ্ক্রিয়
পরিপাককে গতি দিতে পারে। গ্রিনটি, ব্ল্যাকটি ও প্রাকৃতিক জোলাপ বা রেচক ঔষধ
হিসেবে কাজ করে। ল্যাক্টোজ অসহনীয়তার জন্য কিছু মানুষ দুধ পান করতে
পারেননা। তবে যদি আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগে থাকেন তাহলে গরম দুধ
খেলে আপনার কোষ্ঠ ঘন ঘন পরিষ্কার হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করার জন্য
সকালে পানি বা চায়ের পরিবর্তে এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন। এর সাথে সামান্য
মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
আরো যে কাজগুলো করতে পারেন :
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন যেমন- প্রচুর পানি পান করুন, প্রাকৃতিক ডাকে
বিলম্ব করবেননা, কোষ্ঠ পরিষ্কারের ঔষধ ব্যবহার সীমিত করুন, অ্যালকোহল
সেবনের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য অনেক রকমের
ইয়োগা আছে তবে সূর্য নমস্কার ইয়োগাটি অনেক কার্যকরী। তাছাড়া একটি গরম
তোয়ালে শ্রোণি অঞ্চলে দিয়ে ভাপ দিতে পারেন, স্টিম বাথ নিতে পারেন।