.

পিরিয়ড নিয়ে বিব্রতকর কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর সমাধান

আমরা সবাই জানি স্বাস্থ্যগত যে কোনো সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিন্তু কিছু কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে অনেকেই ডাক্তারের কাছে যেতে চান না, বিশেষ করে পিরিয়ড সংক্রান্ত সমস্যাগুলো তো মেয়েরা মুখ ফুটে বলতেই চান না। আপনার যদি এমন কিছু সমস্যা থাকে কিন্তু তা নিয়ে গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে না চান, তাহলে এখানেই দেখে নিতে পারেন কিছু সমাধান।
sasthobarta protidin
১) পিরিয়ডের সময়ে টয়লেট হ্যাবিট পরিবর্তিত হয় কেন?
এ সময়ে শরীরে প্রোস্টাগ্লান্ডিস নামের হরমোন জাতীয় এক ধরণের রাসায়নিক জিনিসে পরিবর্তন আসে। পিরিয়ডের শুরুর দিকে এর কারণে মেয়েদের ইউটেরাস সংকুচিত হতে থাকে এবং এর ফলেই ব্যাথা হতে পারে।
প্রোস্টাগ্লান্ডিস আমাদের হজমতন্ত্রেও পরিবর্তন আনে। এর কারণে আমাদের ঘন ঘন টয়লেটে ছুটতে হতে পারে। আবার এটা কম হলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্ও হতে পারে। তবে পিরিয়ডের সময়ে যদি আপনার মল পিচ্ছিল মনে হয় তাহলে অবশ্য আপনার ডাক্তারের কাছে যাওয়াই ভালো কারণ এটা অন্য কোনো সমস্যার নির্ধারক।
২) টক্সিক শক সিনড্রোম নিয়ে কি চিন্তিত হওয়া দরকার?

অনেকেই জানেন, যে পিরিয়ডের সময়ে প্যাড বা ট্যাম্পন সময়মত পরিবর্তন না করলে টক্সিক শক সিনড্রোমের কারণে হাসপাতালে ছুটতে হতে পারে। এর উপসর্গ হতে পারে বেশ জ্বর, লো ব্লাড প্রেশার, বিভ্রান্তি এবং এনার্জির কমতি। এ থেকে খুব দ্রুতই কোমা, অর্গান ফেইলিওরের মত ভয়ংকর সব সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনি যদি মনে করেন আপনার এমন কোনো সমস্যা হতে পারে, তাহলে খুব দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
৩) পিরিয়ডের সময়ে যৌনাকাঙ্ক্ষা বেশি হয় কেন?

এই প্রশ্নের আসলে একটা নয়, বেশ কিছু উত্তর আছে। পিরিয়ডের সময়ে কারও কারও যৌনাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এটা একেবারেই দেখা যায় না। এটা এস্ট্রাডিওল নামের একটা প্রাইমারি সেক্স হরমোনের কারণে হতে পারে। প্রোজেস্টেরনেরও কিছু ভূমিকা থাকতে পারে এর পেছনে। পিরিয়ডের সময়ে একজন নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেন লেভেল অনেক কম থাকে, কিন্তু টেস্টোস্টেরোনের লেভেল থাকে বেশি। টেস্টোস্টেরোন নারীর যৌনাকাঙ্ক্ষার সাথে সম্পর্কিত। এ কারণে ইস্ট্রোজেন কমে টেস্টোস্টেরোন বেড়ে গেলে তাদের যৌনাকাঙ্ক্ষা বেড়ে যেতে পারে।
৪) পিরিয়ডের সময়ে আমাদের মেজাজ এত ওঠানামা করে কেন?
PMS বা প্রি মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম আসলে অনেকগুলো, এর মাঝে একটি হলো মেজাজের ওঠানামা। হঠাৎ করেই দুঃখ, বিষণ্ণতা, রাগ আপনাকে ছেঁকে ধরতে পারে। আবার আবেগ বেশি হতে পারে, এক মেজাজ থেকে আরেক মেজাজে চলে যেতে পারেন দ্রুতই। এর পাশাপাশি দেখা যায় শরীর ফুলে যাওয়া এবং মাথাব্যাথার মত সমস্যাগুলো। কারণ পিরিয়ডের সময়ে শরীরে থাকা হরমোনগুলো মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারকে প্রভাবিত করে। এসব সমস্যা কম রাখতে আপনার খাদ্যভ্যাস রাখা উচিৎ স্বাস্থ্যকর।
৫) প্যাড এবং ট্যাম্পন ছাড়া আর কী কী উপায় আছে?
বাংলাদেশে অনেক নারীই এখন স্বাস্থ্যকর স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। ট্যাম্পনও অনেকে ব্যবহার করেন। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বারবার ব্যবহার করা যায় এমন মেন্সট্রুয়াল কাপ পাওয়া যায়।
৬) হেভি ব্লিডিং মানে আসলে কতো বেশি?
পিরিয়ডের সময়ে সাধারণ একজন নারী ৮-১৪ চা চামচ রক্ত হারান। এতে প্রতিদিন আড়াই টেবিল চামচের মত রক্তক্ষরণ হয়। তবে প্রতি নারীর জন্যই এটা আলাদা হয়। কিন্তু আপনার যদি হেভি ব্লিডিং হয় তবে ভেতরে কোনো সমস্যা থাকতে পারে। হেভি ব্লিডিং এর পাশাপাশি যদি মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি বা অতিরিক্ত পেট ব্যাথা থাকে তবে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিৎ। রক্তক্ষরণের পেছনে অবশ্য মেনোপজ বা প্রেগনেন্সিরও ভূমিকা থাকতে পারে। 
৭) পিরিয়ড সাইকেলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, কী করা উচিৎ?

আপনার স্বাভাবিক পিরিয়ডের সময়ে যদি কোনো সমস্যা দেখা যায়, পিরিয়ড যদি মিস করেন, অথবা খুব বেশি সময় ধরে পিরিয়ড চলে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিৎ।
আপনার বয়স যদি কম হয়ে থাকে এবং এখনো আপনি জানেন না পিরিয়ডের ক্ষেত্রে কোন ব্যাপারটা স্বাভাবিক এবং কোনটা অস্বাভাবিক, তাহলে ডাক্তার না হলেও এ ব্যাপারে জানে এমন কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আর আপনি যদি যথেষ্ট জানেন নিজের পিরিয়ডের ব্যাপারে, তাহলে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে তা ডাক্তারের কাছে চেক করে নেয়াই ভালো। আপনার শরীর নিয়ে আপনার লজ্জিত হবার কিছু নেই, লুকানোরও কিছু নেই। ঈশ্বরপ্রদত্ত এই শরীরকে সুস্থ রাখা আপনারই কর্তব্য।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »

.